শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯২৭
সাত বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমান গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তাঁর স্কুল জীবন আরম্ভ করেন। নয় বছর বয়সে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠার আগে অন্য আরো দশজন কিশোরের মত শেখ মুজিবুর রহমান খেলার মাঠকেই বেশি ভালোবাসতেন।
১৯৩২/১৯৩৩
শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ বছর বয়সে শেখ ফজিলাতুন্নেসা (রেনু)-কে বিয়ে করেন। তাঁরা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪২
শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছরে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।
১৯৪৩
শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৭
সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি তাঁর দায়িত্ব প্রশংসার সাথে পালন করেন।
১৯৪৬
শেখ মুজিবুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কুখ্যাত ক্যালকাটা কিলিং (সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা) শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তি বজায় রাখার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন, নিজের জীবন বাজি রেখে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের জীবন রক্ষা করেন।
১৯৪৭
ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে আন্দোলনে যোগ দেন। যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তীতে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে। অন্যান্যদের মত ভারত ভাগের পরপরই শেখ মুজিবুর রহমান তড়িঘড়ি করে পূর্ববঙ্গে (পাকিস্তানে) আসেন নি, বরং কয়েক সপ্তাহ তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন, রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি মিশনে যোগ দেন।
১৯৪৮
শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের গণপরিষদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অবশ্যই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে মেনে নিতে হবে।”
১৯৪৯
শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা বিধান এবং অধিকার আদায় আন্দোলন সমর্থন জানান। ১৯ এপ্রিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে মিছিল বের করার প্রস্তুতিকালে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে উপাচার্যের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৫২
২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন, “একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’’ জেলে বন্দী অবস্থাতেই শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন এবং আন্দোলনকে সফল করার জন্য জেল থেকেই পাঠাতেন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
১৯৫৩
শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তাঁর উত্থান হয়।
১৯৫৪
১০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তফ্রন্ট ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টি আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ একাই ১৪৩ টি আসনে জয়ী হয়। শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন- ১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়।
১৯৫৫
সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সব ধর্মের মানুষের অন্তর্ভুক্তি এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি প্রত্যাহার করে নাম রাখা হয় 'আওয়ামী লীগ'।
১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৬ সেপ্টেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬
খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা
১৯৫৭
১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২৪ জুন থেকে জুলাই ১৩ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি সফরে চীনে যান।
১৯৫৮
৭ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেন। ১১ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে হয়রানি করা হয়। ১৪ মাস পরে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেটেই গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬১
হাইকোর্ট কর্তৃক আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা করার পর শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। এ সময়ই শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য উদ্যমী ছাত্র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬২
আইয়ুব সরকার ৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে পুনরায় গ্রেফতার করে। ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করেন।
১৯৬৪
২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।
১৯৬৫
পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ‘তথাকথিত’ আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তাঁকে এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টের আদেশে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
১৯৬৬
শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়ায় আঘাত করে। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিঙে শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
১৯৬৮
৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। জেলে বন্দী থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের উপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি করা হয়। ...
১৯৬৯
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়।
১৯৭০
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন। ...
১৯৭১
১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়।